ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এতো মৃত্যুর পরও পাহাড় কাটা চলছে বান্দরবানে

বান্দরবান প্রতিনিধি ::

পাহাড়ধসে বহু মানুষের মৃত্যুর পরও বান্দরবানে পাহাড়কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এবার খোদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সন্নিকটেই দেদারছে চলছে পাহাড়কাটা। রাত–দিন শ্রমিক দিয়ে ক্যান্টনমেন্টের সামনে সেগুনবাগিচা এলাকায় পাহাড় কেটে জায়গা সমান করা ও মাটি সরিয়ে নেয়া হলেও প্রশাসনের কোনো নজরই নেই। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় ঐ এলাকার বহু পরিবার পড়েছে সমস্যার মধ্যে। যে কোন সময়ে পাহাড়ধসে আরো বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে আগামী বর্ষা মৌসুম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সেগুন বাগিহচাসহ আশেপাশের এলাকার বসবাসকারীরা।
৪ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বহু শ্রমিক প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে জায়গা সমান করার কাজ করছে। এছাড়া পাহাড়ের মাটি সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেগুনবাগিচা জায়গাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কাছেই সাঙ্গু ব্রিজের ওপারে। জায়গাটির সামনেই রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১৫/ ২০ দিন থেকে ঐ এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি শ্রমিক দিয়ে পাহাড়কাটার কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে বিশাল জায়গাজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে ফেলে হয় সেখানে। খাড়াভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় ঐ এলাকার ২০টির বেশি বসতঘর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ভুট্টো, মনির আহম্মসদ চৌধুরীসহ অন্যান্যরা জানিয়েছেন, দিনে রাতে প্রকাশ্যে শ্রমিক লাগিয়ে মঞ্জুরুল আলম, চন্দন বড়–য়া, ললিত মোহন, দলিলুর রহমান, নুর আলমসহ একটি চক্র পাহাড় কেটে ফেলছে। সাঙ্গু নদীর ওপাড়ে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনার কাছে এভাবে পাহাড় কাটা চললেও কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা জানান, ঐ এলাকায় চক্রটি জায়গা কিনে নিয়ে সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতেই তারা পাহাড় কেটে ফেলছে। কোনো কোনো জায়গায় খাড়াভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাহাড় কাটার ফলে নজরুল ইসলাম ভুট্টো, মনির আহম্মদ চৌধুরী, আকতার কামাল জাহাঙ্গির আলমেরসহ ২০টিরও বেশি কাচা ও পাকা ঘর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সেগুনবাগিচাই নয় রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন এলাকার আশেপাশে বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাহাড়কাটা। কোন কোন জায়াগায় রাতের আঁধারে ও বেশ কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে দিনে–দুপুরে পাহাড়কাটা চলছে। স্থানীয়রা জানান ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় বার বার অভিযুক্তদের বলা হলেও তারা কর্ণপাতই করছে না। বরং তারা উল্টো বলছে বিভিন্ন জায়গায় টাকা খরচ করেই পাহাড়কাটা হচ্ছে। সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা মনির আহম্মদ জানান, পাহাড় কেটে ফেলায় ও ঝিড়ির মাটি সরিয়ে নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উপচে ঐ এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে ও পাহাড় ধসে পড়তে পারে। এ কারণে বসবাসকারী সবাই এখন আতংকে রয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও ক্যান্টমেন্টের সন্নিকটে এভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত দলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বসতঘর করার জন্য কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে এখন নতুন করে আর কাটা হচ্ছে না। ললিতমোহন ঘর তৈরির জন্য কিছু অংশ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, অন্যারা বিশাল এলাকাজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটেছে। ফলে বাসকারীরা এখন বিপদের মধ্যে রয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, কারা পাহাড় কাটছে তা তদন্ত করে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: